মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১



২০১৭ সালে সবর্শেষ সংস্করণ আইন বই হতে নেয়া

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১

(১৯৬১ সনের ৮নং অধ্যাদেশ)

বিবাহ পারিবারিক আইন বিষয়ক কমিশনের কতিপয় সুপারিশ কার্যকর করিবার জন্য আনীত অধ্যাদেশ।
যেহেতু বিবাহ এবং পারিবারিক আইন বিষয়ের কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা সমীচীন প্রয়োজনীয়।
সেহেতু এক্ষণে, ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবরের ফরমান অনুযায়ী এবং তত্পক্ষে তাহাকে সমর্থনকারী সকল ক্ষমতা প্রয়োগক্রমে নিম্ন রূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন জারী করিলেনঃ
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, বিস্তৃতি, প্রযোজ্যতা এবং আরম্ভঃ
) অত্র অধ্যাদেশ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ নামে অভিহিত করা হইবে।
) সমগ্র বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকদের উপর তাহারা যেখানেই থাকুক না কেন, ইহা প্রযোজ্য হইবে।
) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, যে তারিখ নিদ্দিষ্ট করিবেন, সেই তারিখে উহা কার্যকর হইবে।
২।সংজ্ঞাসমূহঃ
বিষয় অথবা প্রসংঙ্গে প্রতিকুল কিছু না থাকিলে এই অধ্যাদেশ-
) “সালিশী কাউন্সিলবলিতে চেয়ারম্যান এবং অত্র অধ্যাদেশে ব্যবস্থিত একটি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত পক্ষগণের প্রত্যেকের একজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত একটি সংস্থাকে বুঝায়।
শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে কোন পক্ষ ধাযকৃত সময়ের মধ্যে কোন প্রতিনিধি মনোনীত করিতে ব্যর্থ সেইক্ষেত্রে ঐরূপ প্রতিনিধি ব্যতিত গঠিত সংস্থা সালিশী কাউন্সিল হইবে।
২) চেয়ারম্যানবলিতে
() ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বুঝায়; বা 
() পৌরসভার চেয়ারম্যানকে বুঝায়; বা 
() মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র বা প্রশাসনকে বুঝায়; বা 
() অত্র অধ্যাদেশের অধীন চেয়ারম্যানের কর্তব্য সম্পাদন করিবার সেনানিবাস এলাকায় সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিকে বুঝায়, () যেক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বাতিল করা হয়, সেইক্ষেত্রে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্তব্য সম্পাদনকারি বা অবস্থানভেদে, অত্র অধ্যাদেশের অধীন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার নিমিত্ত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিকে বুঝায়ঃ
শর্ত খাকে যে, যদি ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র অমুসলিম হন, বা তিনি নিজেই সালিশী আবেদন করিতে ইচ্ছুক হন, বা অসুস্থতা অথবা অপর কোন কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, সেক্ষেত্রে অত্র অধ্যদেশের উদ্দেশ্যাবলী নিমিত্ত ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা অথবা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ইহার মুসলিম সদস্যগণের বা কমিশনারগণের মধ্যে হইতে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করিবেন,
) "মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন " বলিতে ১৯৮২ সনের চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮২ সনের ৩৫নং অধ্যাদেশ), অথবা ১৯৮৩ সনের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৪০নং অধ্যাদেশ) অথবা ১৯৮৪ সনের খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সনের ৭২নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে গঠিত বর্ণিত বিষয়ে যথানির্ধারিত এখতিয়ারের অধিকারী মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বুঝায়;
) "পৌরসভা" বলিতে ১৯৭৭ সনের পৌরসভা অধ্যাদেশ (১৯৭৭ সনের ২৬নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে গঠিত বর্ণিত বিষয়ে যথানির্ধারিত এখতিয়ারের অধিকারী পৌরসভা বুঝায়;
) "নির্ধারিত" বলিতে ১১ ধারার অধীনে প্রনীত রুলসমূহ কর্তৃক নির্ধারিত বুঝায়;
) "ইউনিয়ন কাউন্সিল" বলিতে ১৯৮৩ সনের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৫১নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে গঠিত বর্ণিত বিষয় যথানির্ধারিত এখতিয়ারের অধিকারী ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝায়।
৩। অন্যান্য আইন সমূহ, ইত্যাদি বাতিল করার নিমিত্ত অধ্যাদেশঃ
) কোন আইন, প্রথা বা নীতি বর্তমান থাকা সত্ত্বেও অত্র অধ্যাদেশ এর বিধানসমূহ কার্যকরী হইবে।
) সন্দেহ দূরীকরনের জন্য এতদ্বারা ইহা ঘোষণা করা যাইতেছে যে, ২০০১ সনের সালিশী আইন এর বিধান সমুহ, ১৯০৮ সনের দেওয়ানী কার্যবিধি (১৯০৮ সনের নং আইন)এর বিধানসমূহ আদালতের কার্যবিধি নিয়ামক অন্য কোন আইনের বিধানসমূহ কোন সালিশী কাউন্সিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।
) উত্তরাধিকারঃ
উত্তরাধিকার উন্মুক্ত হওয়ার পূর্বে মৃত ব্যক্তির কোন  ছেলে অথবা মেয়ের মৃত্যু ঘটিলে যদি উত্তরাধিকার উন্মুক্ত  হওয়ার সময় ঐরুপ ছেলে অথবা মেয়ের সন্তানাদি জীবিত থাকে তাহা হইলে উক্ত ছেলে অথবা মেয়ে উত্তরাধিকার উন্মুক্ত হওয়ার সময় জীবিত থাকিলে যে অংশ পাইত তাহারা সমষ্টিগতভাবে ঠিক সেই অংশ পাইবে।
) বাতিল:
(১৯৭৪ সনের ৫২নং আইন দ্বারা বাদ দেওয়া হইয়াছে।)
) বহুবিবাহঃ
) কোন ব্যক্তির বিবাহ বলবত থাকিতে সে সালিশী কাউন্সিলের লিখিত পূর্বানুমতি ব্যতীত কোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না বা ঐরূপ অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠিত কোন বিবাহ ১৯৭৪ সনের মুসলিম বিবাহ তালাক (রেজিস্ট্রেকরণ) আইন এর অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত হইবে না।
) ১নং উপধারা অনুযায়ী অনুমতির দরখাস্ত নির্ধারিত ফিস-সহ চেয়ারম্যানের নিকট নিদিষ্ট দফতরে দাখিল করিতে হইবে উহাতে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণসমূহ এবং এই বিবাহের ব্যাপারে বর্তমানে স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের সম্মতি লওয়া হইয়াছে কিনা উহার উল্লেখ থাকিবে।
) ২নং উপধারা অনুযায়ী দরখাস্ত গ্রহণ করিবার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারীকে বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের প্রত্যককে একজন করিয়া প্রতিনিধি মনোনীত করিতে বলিবেন। উক্তরূপে গঠিত সালিসী কাউন্সিল প্রস্তাবিত বিবাহ প্রয়োজনীয় ন্যায়সঙ্গত বলিয়া মনে করিলে যুক্তিযুক্ত বলিয়া মনে হইতে পারে এমন সকল শর্ত থাকিলে সাপেক্ষে প্রার্থিত আবেদন মঞ্জুর করিতে পারেন।
) দরখাস্তের বিষয় নিস্পত্তি করিবার নিমিত্ত সালিশী কাউন্সিল নিস্পত্তির কারণাদি লিপিবদ্ধ করিবেন। নিদ্দিষ্ট সময় মধ্যে যে কোন পক্ষ নিদ্দিষ্ট ফিস প্রদানক্রমে নিদ্দিষ্ট দফতরে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের নিকট পূর্ণবিবেচনার নিমিত্ত দরখাস্ত দাখিল করিতে পারে; তাঁহার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হইবে কোন আদালতে এই সম্নন্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
) কোন ব্যক্তি যদি সালিশী কাউন্সিলের অনুমতি ব্যতীত অন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে সে-
) বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগনের তলবী স্থগিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা ক্ষনাপরিশোধ করিতে হইবে। উক্ত টাকা উক্তরুপে পরিশোধ না করা হইলে বকেয়া ভূমি রাজস্বরূপে আদায়যোগ্য হইবে; এবং
) অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত হলে এক সর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় প্রকার দন্ডীয় হইবে।
৭।তালাকঃ
) কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে ইচ্ছা করিলে সে কোন প্রকারেই হউক তালাক উচ্চারণ করিবার পরেই সে তালাক দিয়েছে বলিয়া চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশ মাধ্যমে জানাইবে স্ত্রীকে উহার একটি কপি পাঠাইবে।
) কোন ব্যক্তি ১ নং উপধারার বিধান লংঘন করিলে সে এক বসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হইবে।
) ৫নং উপবিধির বিধান অনুসারে অন্য কোন ভাবে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে কোন তালাক পূর্বাহ্নে প্রত্যাহার না করা হইলে ১নং উপধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরিত নোটিশের তারিখ হইতে ৯০ দিন অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত তালাক কার্যকরী হইবে না।
) ১নং উপধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের ভিতর চেয়ারম্যান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুর্নমিলন স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি সালিশী কাউন্সিল গঠন করিবেন এই কাউন্সিল পুর্নমিলন ঘটাইবার নিমিত্ত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
) তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকিতে ৩নং উপধারায় বণিত মেয়াদ বা গর্ভকাল এই দুই এর মধ্যে যাহা পরে শেষ হইবে তাহা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কাযকরী হইবে না।
) এই ধারা অনাসারে কার্যকরী তালাক মাধ্যমে যে স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হইয়াছে, বিবাহ ভঙ্গ তৃতীয়বারের মত কার্যকরী না হইলে তৃতীয় ব্যক্তির সহিত মধ্যবর্তীকালীন কোন বিবাহ ব্যতিতই তাহার আগের স্বামীর সহিত পুর্নবিবাহে কোন প্রকার বাধা থাকিবে না।
৮। তালাক ব্যতিত অন্যভাবে বিবাহ ভঙ্গঃ
যেক্ষেত্রে স্ত্রীর নিকট তালাক প্রদানের অধিকার যথাযথভাবে অর্পণ করা হইয়াছে এবং সে এই অধিকার প্রয়োগ করিতে ইচ্ছুক হয়, অথবা যেক্ষেত্রে বিবাহের যে কোন পক্ষ তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ ভঙ্গ করিতে ইচ্ছুক হয়, সেইক্ষেত্রে প্রয়োজনমত পরিবর্তনসহ যতদূর পর্যন্ত প্রয়োগযোগ্য ততদূর পর্যন্ত ধারার বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
৯। ভরণপোষণঃ
) যেক্ষেত্রে কোন স্বামী তাহার স্ত্রীকে পর্যাপ্তভাবে ভরণপোষণ দিতে অসমর্থ হয় অথবা একাধিক স্ত্রী থাকিলে  তাহাদিগকে সমভাবে ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সকলে অথবা স্ত্রীগণের যে কোন জন অপর কোন আইনসঙ্গত প্রতিকার প্রার্থনা ব্যতীতও চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করিতে পারে। চেয়ারম্যান একটি সালিশী কাউন্সিল গঠন করিবেন উক্ত কাউন্সিল স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণপোষণ বাবদ প্রদানের নিমিত্ত টাকার অংক নির্দিষ্ট করিয়া সার্টিফিকেট ইস্যু করিতে পারিবেন।
) একজন স্বামী অথবা স্ত্রী নির্ধারিত পন্থায় নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে নির্ধারিত ফিস প্রদানপূর্বক উক্ত সার্টিফিকেট পুর্নবিবেচনার নিমিত্ত সহকারী জজের নিকট আবেদন পেশ করিতে পারেন। তাঁহার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে এবং কোন আদালতে এই সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাইবে না।
) ১নং অথবা ২নং উপধারা অনুযায়ী দেয় কোন টাকা যথাসময়ে পরিশোধ না করিলে বকেয়া ভূমিরাজস্বরুপ আদায়যোগ্য হইবে।
১০। দেনমোহরঃ
যেক্ষেত্রে দেনমোহরের টাকা পরিশোধের পন্থা কাবিননামায় অথবা বিবাহের চুক্তিতে বিস্তারিতভাবে নির্দিষ্ট করা হয় নাই সেক্ষেত্রে দেনমোহরের মোট পরিমানই তলবমাত্র পরিশোধযোগ্য বলিয়া ধরিয়া লওয়া হইবে।
১১। রূলসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতাঃ
) অত্র অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যে কার্যে পরিণত করিবার নিমিত্ত সরকার নিয়ম-কানুন সমুহ প্রণয়ন করিতে পারিবেন।
) অত্র ধারার অধীনে নিয়ম-কানুন সমূহ প্রণয়নে সরকার কোন নিয়ম-কানুন লংঘনের নিমিত্ত এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা পাঁচশত টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রাখিতে পারিবেন।
) অত্র ধারার অধীনে প্রনীত নিয়ম-কানুন সমূহ সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হইবে পর এমনভাবে কার্যকরী হইবে যেন ঐগুলী এই অধ্যাদেশে বিধিবদ্ধ করা হইয়াছে।
১১ক। বিচারের স্থানঃ
সাময়িকভাবে বলবঅন্য কোন আইনে কোন কিছু থাকা সত্ত্বেও এই অধ্যাদেশের অধীনে সংঘটিত কোন অপরাধ আদালত কর্তৃকই বিচার্য হইবে যাহার স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে-
) অপরাধটি সংঘটিত হইয়াছিল,
) অভিযোগকারী বা আসামী বাস করে বা সর্বশেষ বাস করিয়াছিল।
(১৯৮৬ সনের এপ্রিল প্রকাশিত ২৪নং অধ্যাদেশ, (৮৬)কর্তৃক সংশোধিত)

-0-

No comments: